Trivia

মহালয়া: শুভ-অশুভ তরজা

কলমে : শুভেচ্ছা দত্ত

একবছরের অপেক্ষা কাটিয়ে উমার আগমন এবং বাঙালির উৎসব-উল্লাসের সমন্বয়ে মহালয়া আমাদের সিংহভাগের কাছেই শুভ বার্তা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সেই বার্তার গতিও গগনচুম্বী। 

কিন্তু আদতে মহালয়া আর দুর্গাপুজোর যোগসূত্রের অবকাশ নেই, এমনকি দিনটাও শুভ নয়। বরং, এর সঙ্গে হিন্দু পুরাণমতে যোগাযোগ রয়েছে মহাভারতের। 

কর্ণ মৃত্যুপরবর্তীকালে স্বর্গে গমন করলে খাদ্যস্বরূপ পান স্বর্ণমুদ্রা। তিনি যমরাজের কাছে কারণ জানতে চাইলে যমরাজ বলেন, কর্ণ যেহেতু জীবনভর স্বর্ণদান করেছেন, পিতৃপুরুষকে জলদান করেননি, তাই এই ব্যবস্থা। প্রত্যুত্তরে কর্ণ বলেন, মৃত্যুর একদিন আগেই তিনি তার পূর্বপুরুষের কথা জেনেছেন। সুতরাং তার কী দোষ? যমরাজ কর্ণের কথা বুঝে পক্ষকালের জন্য তাকে মর্ত্যে ফিরে পূর্বপুরুষকে জলদানের বিধান দেন। এই অনুযায়ী পক্ষকালের তর্পণ পিতৃপক্ষ বলে সূচিত হয়। পিতৃপক্ষের অন্তিম দিনে অমাবস্যা তিথি হয় ‘মহালয়া’ তথা মহৎ-আলয়। এইদিন পিতৃপুরুষ জল ও পিন্ডলাভের আশায় মর্ত্যে আসেন এবং তর্পণের মাধ্যমে মুক্তিলাভ করেন। এই তিথি মৃত প্রিয়জনকে স্মরণ করে, শান্তি প্রার্থনার। শ্রাদ্ধশান্তির মতোই এই অনুষ্ঠানও তাই শুভ নয়। 

মহালয়ার দিন আকাশবাণী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে কারণ মহালয়ার অমাবস্যা কাটলেই দেবীপক্ষের আরম্ভ হয়। কিন্তু, এর সঙ্গে মহালয়া তিথির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ অবান্তর। 

বর্তমানের ‘স্মার্ট’ বাঙালিরা আধুনিক গড্ডলিকা প্রবাহে মিশে কেবল ‘শুভ মহালয়া’ কে সঠিক ধরেই থামেননি বরং তার পিছনে একাধিক যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। এই যুক্তিগুলোই পুরাণ-সংস্কৃতি-বিশ্বাসের মূলে যে উদাসীন আঘাত করছে, মা মহামায়াই এর একমাত্র নিষ্কৃতি!